বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, অসংখ্য ত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ে দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে দেশের মানুষের উপর জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসা স্বৈরাচার সরকারের পতন হয়েছে। এই আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকার তার শাসনামলে কত মানুষকে হত্যা করেছে তার হিসাব করাও কঠিন। লাশের বিভৎসতা দেখে কোনো পরিবার স্থির থাকতে পারেনি। স্বামী সন্তান হারিয়ে হাজারো মানুষ দিশেহারা। জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ হতে দেশকে স্বৈরাচার মুক্ত করার এই আন্দোলনের সকল শহীদ পরিবারের সাথে আমরা আছি এবং ভবিষ্যতেও থাকবো ইনশাআল্লাহ। সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে গণঅভ্যুত্থানের শহীদেরা আমাদের প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।
আজ ২০শে আগস্ট মঙ্গলবার, বিকালে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে আয়োজিত বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জ্ঞাপন, দোয়া ও আর্থিক সহায়তা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর মু. নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান। কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় আরও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর যথাক্রমে আব্দুস সবুর ফকির ও অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি যথাক্রমে মুহা. দেলাওয়ার হোসেন, মুহাম্মদ কামাল হোসাইন ও ড. আব্দুল মান্নান। ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক মোকাররম হোসাইন, ড. মোবারক হোসাইন, ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট এস এম কামাল উদ্দিন সহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, আজকে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ পরিবারের সদস্যদের সাথে আমরা মিলিত হয়েছি। এই শহীদ পরিবার সদস্যদের সান্ত¡না দেওয়ার ভাষা আমাদের নেই তবে আমাদের জন্য স্বস্তি এতটুকু যে, যার নির্দেশে ছাত্র জনতার উপরে গুলি চালিয়ে এতোগুলো মানুষকে হত্যা করা হল, জনগণের উত্তাল আন্দোলনে পালিয়ে যাওয়া সেই স্বৈরাচারের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আজকে সারাদেশে শেখ হাসিনা ও তার ফ্যাসিবাদের দোসরদের নামে সাধারণ মানুষ খুনের মামলা দায়ের করেছে। স্বজন হারা মা বাবা পরিবার গুলো অবশ্যই ন্যায়বিচার পাবে এটা আমরা প্রত্যাশা করছি। যারা ন্যায়ের জন্য যারা জীবন দিয়েছেন রাসূল (সা) তাদেরকে শহীদ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা এক নতুন বাংলাদেশ পেলাম, মহান আল্লাহ তাদের উত্তম মর্যাদা দান করুন।
মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, দেশ ও জনপদকে মুক্ত করতে যারা জীবন দিয়ে শহীদ হয়ে গেলেন, তারা আমাদের জাতীয় বীর। এখন রাষ্ট্রীয়ভাবে এসব শহীদদের বীর হিসেবে ঘোষণা করা উচিৎ। জামায়াতের পক্ষ হয়ে আমরা সেই দাবি জানাচ্ছি। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি খুনিদের বিচার অবশ্যই বাংলাদেশে হবে।
নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ছাত্র জনতার আন্দোলনে যারা গণহত্যা পরিচালনা করেছেন তাদের বিচার এদেশের মাটিতে হবে। ইতোমধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিচারের কার্যক্রম শুরু করেছে, আমরা তাদেরকে সাধুবাদ জানায়। আন্তর্জাতিক আদালতেও ইতোধ্যেই গণহত্যাকারী শেখ হাসিনা সহ তার সব দোসরদের নামে মামলা হয়েছে। গণঅভ্যুত্থানের সময়ে ছাত্র জনতাকে হত্যাকারীদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে।
অনুষ্ঠানে শহীদ পরিবারের সদস্যদের স্মৃতিচারণে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয় ও কান্নার রোল পড়ে যায়।