বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক জাতীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধ ইসলামের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। আল্লাহ তা’য়ালার বিশেষ সাহায্যে দ্বিতীয় হিজরির ১৭ই রমজান মদিনা থেকে ৭০ কিলোমিটার দক্ষিণে বদর প্রান্তরে সত্য-মিথ্যার পার্থক্য নির্ণয়কারী এ যুদ্ধ সংঘঠিত হয়। এই ঐতিহাসিক যুদ্ধ বিজয়ই মদীনায় নবগঠিত ইসলামী রাষ্ট্রের ভিতকে সু-প্রতিষ্ঠিত করে। বদরের যুদ্ধ ইসলামের ইতিহাসে সত্য ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার এক অমূল্য স্মারক। কুরআনের আলোকে ইসলামী সমাজ বিনির্মাণের প্রেরণার বাতিঘর। সেই চেতনাকে ধারণ করেই আমরা একটি সোনালী সমাজ বিনির্মাণের লক্ষ্যে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছি।
তিনি আজ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে আয়োজিত পবিত্র মাহে রমজানের তাৎপর্য ও ঐতিহাসিক বদর দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর জননেতা নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান। এসময় আরও বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি যথাক্রমে মোহাম্মদ দেলাওয়ার হোসেন ও আবদুল জব্বার, কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য আব্দুস সবুর ফকির। আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ ও মজলিশে শুরা সদস্য সহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ। অনুষ্ঠানটি অনলাইন ভার্চুয়াল মাধ্যম জুম ও ফেসবুকে সরাসরি অনুষ্ঠিত হয়।
অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, সিয়াম বা রোজা হচ্ছে আমাদের জন্য ঢাল স্বরুপ। নফসের দাসত্ব থেকে মুক্ত হয়ে তাকওয়া অর্জন করাই সিয়ামের মূল উদ্দেশ্য। রমজান মাসে শুধু খানা-পিনা বন্ধ করা সিয়ামের আসল কাজ নয়। যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা ও কাজ বন্ধ করলো না অর্থাৎ সমস্ত অন্যায় কাজ বর্জন করলো না মূলতঃ তার রোজা রাখা বা না রাখা কোন কাজে আসবে না। রোজার অন্যতম শিক্ষা নফসের নিয়ন্ত্রন করা। পবিত্র এই রমজান মাসে তাকওয়া অর্জন ও আল্লাহ তায়ালার হুকুম পালনের মাধ্যমে কুরআনের আলোকে নিজেদেরকে গঠন করতে হবে। সেই সাথে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় কুরআনের বিধান মানার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করার চেষ্টা করতে হবে। ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধ এই রমজান এই মাসেই সংঘটিত হয়েছিল। শুধু মুসলিম ইতিহাস নয় বরং মানব সভ্যতার ইতিহাসে বদর যুদ্ধ এক ঐতিহাসিক স্থান দখল করে আছে। এ যুদ্ধ ছিল সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী এবং ইতিহাস নির্ধারণকারী যুদ্ধ। আরব সমাজ কি আগামী দিনে ইসলামের সুশীতল ছায়ায় সমাবেত হবে না জাহিলিয়াতের অন্ধকারচ্ছন্ন পথে হাটবে তার ফয়সালা হয় বদরের প্রান্তরে।
মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, বদরের যুদ্ধ ছিলো একটি অসম যুদ্ধ। মাত্র ৩১৩ জন সাহাবি নিয়ে সে সময়ের আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত মক্কার কাফেরদের সঙ্গে বদরের যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। সেদিন মক্কার কাফেররা ইসলামকে দুনিয়ার বুক থেকে চিরতরে মিটিয়ে দেয়ার লক্ষে সর্বশক্তি নিয়ে বদরের প্রান্তরে সমাবেত হয়। রাসূল সা. আল্লাহর উপর ভরসা করে এক অসম যুদ্ধের দিকে এগিয়ে যান। একদিকে রাসূলুল্লাহ স. এর নেতৃত্বে মাত্র ৩১৩ জন প্রায় নিরস্ত্র মুজাহিদ আর অপরদিকে আবু জেহেলের নেতৃত্বে রয়েছে ১০০০ প্রশিক্ষিত সৈন্যের সুসজ্জিত বাহিনী। কিন্তু আল্লাহর সাহায্যে এ অসম লড়াইয়ে নিরস্ত্র মুষ্টিমেয় মুজাহিদদের কাছে পরাজিত হয় সুসজ্জিত বিশাল বাহিনী। সংখ্যা বা যুদ্ধাস্ত্র নয় বরং আল্লাহর উপর উপর অবিচল বিশ্বাস, অসীম সাহস ও মিথ্যার কাছে মাথা নত না করার দৃঢ় প্রত্যয় ছিল এই অসম যুদ্ধে বিজয়ের মূল নিয়ামক।
সভাপতির বক্তব্যে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, হাজার মাসের চেয়ে উত্তম রাত এই মাহে রমজানের মধ্যে নিহিত রয়েছে। মহান আল্লাহ প্রতিটি মুসলিমকে তাকওয়ায় পরিপূর্ণ হওয়ার জন্য এ মাসের ব্যবস্থা রেখেছেন। অন্যদিকে বদর যুদ্ধের বিজয়ের মাধ্যমে ইসলামের পতাকা তথা দ্বীনকে বিজয়ী শক্তি হিসেবে আল্লাহ মনোনিত করেছেন। প্রকৃত পক্ষে ইসলামকে রাষ্ট্রশক্তি হিসেবে বদরের প্রান্তরে বিজয় দিয়েছেন। আল্লাহ ঈমানদারদেরকে বিজয়ী করতে চান তবে সেই সাফল্য অর্জনের জন্য মানদন্ড হচ্ছে নৈতিক শক্তি, সেই শক্তিকে কাজে লাগিয়ে আজও ইসলামের বিজয় ও আল্লাহর সাহায্য পাওয়া সম্ভব। আল্লাহর ভয় এবং ভালোবাসা বদর যুদ্ধের মাধ্যমে পরিলক্ষিত হয়েছিল। তাকওয়ার শিক্ষায় সমৃদ্ধ হয়ে ইসলামের সুমহান আদর্শের আলোকে ন্যায় ও ইনসাফ ভিত্তিক একটি কল্যাণরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য প্রচেষ্টা চালাতে হবে। যেখানে মানুষের সকল মৌলিক অধিকার বাস্তবায়ন হবে। মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা থাকবে। তিনি সকলকে দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে ভূমিকা রাখার উদাত্ব আহবান জানান।