বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেছেন, পরিশুদ্ধ সমাজ বিনির্মাণে সর্বস্তরে ইসলামী শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার বিকল্প কিছু নেই। মুসলিম প্রধান বাংলাদেশে মানুষের নৈতিকতা সমুন্নত রাখার স্বার্থে শিক্ষা ব্যবস্থার সকল স্তরে ইসলামী শিক্ষা প্রচলন করতে হবে। ইসলামী শিক্ষা বিস্তারে বাংলাদেশে যে কয়েকজন ক্ষণজন্মা পুরুষ ছিলেন শহীদ আব্দুল মালেক তাদের মধ্যে অন্যতম। আব্দুল মালেকের প্রত্যেকটি কাজই ছিল দ্বীনের উদ্দেশ্যে। জানার আগ্রহ ছিল তার অনেক বেশি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র আব্দুল মালেক খুব কম সময়ের মধ্যেই সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সমর্থ হন। তার সকল কাজের মধ্যমনি ছিল কিভাবে ইসলামী শিক্ষাকে এদেশে বাস্তবায়ন করা যায়। ইসলামী শিক্ষার কথা বলতে গিয়ে নিজের জীবনকে একেবারে তুচ্ছ মনে করে শাহাদাতের অমিয় পেয়ালা পান করেন শহীদ আব্দুল মালেক।
প্রাচ্যের অক্সফোড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। মানুষ গড়ার এই আঙ্গিনায় আজ থেকে প্রায় ৫২ বছর আগে হত্যা করা হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন বিভাগের সেরা ছাত্র, তৎকালীন ছাত্র ইসলামী আন্দোলনের ঢাকা শহর সভাপতি শহীদ আব্দুল মালেককে। ১৯৬৯ সালের ১২ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিপা আয়োজন করে এক মুক্ত আলোচনা সভার। সেখানে অংশ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সেরা ছাত্র অত্যন্ত যুক্তিপূর্ণ তথ্যভিত্তিক ও বলিষ্ঠভাবে তুলে ধরেছেন ইসলামী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তার কথা। তার ওই বক্তব্যে আকৃষ্ট হয়ে উপস্থিত সবাই ইসলামী শিক্ষার পক্ষেই তাদের মত প্রদান করেন। এতে গাত্রদাহ হয় আওয়ামী-বামপন্থীদের। শুধু আলোচনা চলাকালে হট্টোগোলই নয়, এই উজ্জল নক্ষত্রকে পৃথিবী থেকে চিরতরে বিদায় করতে তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে তার উপর চালানো হয় ন্যাক্কারজনক হামলা। ইতিহাসের ওই নারকীয়, পৈশাচিক ও বর্বর নির্যাতনের শিকার হন জাতির ক্ষণজন্মা শ্রেষ্ঠ সন্তান আব্দুল মালেক।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঝিনাইদহ জেলা শাখার উদ্যোগে আয়োজিত ইসলামী শিক্ষা আন্দোলনের মহান পথিকৃত শহীদ আব্দুল মালেক রহ:-এর শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে ‘সাম্য মানবিক মর্যাদা ও ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সমাজ গঠনে ইসলামী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক আলোচনা সভা ও ইসলামী সাংস্কৃতিক প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এই অনলাইন ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানটি কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঝিনাইদহ জেলা আমির আলী আজম মো: আবু বকরের সভাপতিত্বে এবং ঝিনাইদহ জেলা সেক্রেটারি অধ্যাপক আব্দুল আওয়ালের সঞ্চালনায় আয়োজনে স্বাগত ভাষণ দেন ঝিনাইদহ জেলা শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক আলফাজ উদ্দীন।
অন্যদের মাঝে আলোচনা করেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঝিনাইদহ জেলা নায়েবে আমির অধ্যাপক মতিয়ার রহমান, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঝিনাইদহ জেলা সহকারী সেক্রেটারি মো: আব্দুল হাই, কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান, ঢাকা মহানগরী উত্তরের ওলামা মাশায়েখ পরিষদের সভাপতি ও ঝিনাইদহ সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ড. মো: হাবিবুর রহমানসহ প্রমুখ।
ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেছেন ‘যারা আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয় তাদেরকে তোমরা মৃত বলো না, বরং তারা জীবিত কিন্তু এ ব্যাপারে তোমাদের কোনো চেতনা নাই।’
শহীদ আব্দুল মালেক আজকে আমাদের মাঝে নেই, কিন্তু তার রেখে যাওয়া প্রেরণা চির ভাস্বর হয়ে আছে এবং থাকবে। একজন আব্দুল মালেকের জায়গায় আজ লাখ লাখ আব্দুল মালেক ছুটে এসেছে। শহীদ আব্দুল মালেক ইসলামী শিক্ষা বা ইসলামী আন্দোলনকে প্রতিষ্ঠিত হিসেবে দেখে যেতে পারেননি ঠিকই কিন্তু তার রেখে যাওয়া কাজকে ত্বরান্বিত করার জন্য তার উত্তরসূরিরা জানবাজ চেষ্টা করছে এবং করবে। পেছন থেকে প্রেরণা যোগাবে লক্ষ কোটি শহীদের মিছিলে শামিল হওয়া শহীদ আব্দুল মালেক।
ড. মাসুদ আরো বলেন, শহীদ আব্দুল মালেকের ভাষায় বলি- জানি আমার দুঃসংবাদ পেলে মা কাঁদবেন, কিন্তু উপায় কি বলুন? বিশ্বের সমস্ত শক্তি আল্লাহর দেয়া জীবন বিধানকে পৃথিবীর বুক থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা করছে। আমরা মুসলমান যুবকেরা বেঁচে থাকতে তা হতে পারে না। হয় বাতিল উৎখাত করে সত্যের প্রতিষ্ঠা করবো নচেৎ সে প্রচেষ্টায় আমাদের জীবন শেষ হয়ে যাবে। আপনারা আমায় প্রাণভরে দোয়া করুন জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দিয়েও যেন বাতিলের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে পারি। কারাগারের অন্ধকার, সরকারি যাঁতাকলের নিষ্পেষণ যেন আমাদেরকে ভড়কে দিতে না পারে।