বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের লালবাগ বংশাল জোনের ৭টি থানায় পৃথক পৃথক ভাবে অগ্রসর কর্মীদের নিয়ে দিনব্যাপী শিক্ষা শিবির অনুষ্ঠিত হয়েছে। শিক্ষা শিবির গুলোতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ। শিক্ষা শিবিরে থানা ভিত্তিক পৃথক পৃথক স্পটে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর যথাক্রমে আব্দুস সবুর ফকির ও এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও মহানগরীর সহকারী সেক্রেটারী যথাক্রমে দেলাওয়ার হোসেন ও কামাল হোসাইন। এছাড়াও আরও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও মহানগরীর কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা ফরিদুল ইসলাম, ড. মোবারক হোসাইন, ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি হাফেজ রাশেদুল ইসলাম, আব্দুল হাই, ড. শামীমুল বারী, মাহবুবুল আলম ভূঁইয়া ও মতিউর রহমান প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেছেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী সরকার উন্নয়নের যিকির তুলে এদেশের মানুষের বাক-স্বাধীনতাকে হরণ করেছে। জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকারকে কেড়ে নিয়েছে। আজ দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে ইসলাম ও নৈতিকতাকে সরিয়ে দিয়ে এদেশের ছাত্র সমাজ ও তরুণ প্রজন্মকে ধ্বংস করা হচ্ছে। শিক্ষিত তরুণ যুবকেরা শহরে ঘুরে ঘুরে চাকরী না পেয়ে বেকারত্বের যাতাকলে পিষ্ট হচ্ছে। এমনকি ক্ষুধার তাড়নায় তারা ৩ বেলা ভাতের বিনিময়ে টিউশনিকে পেশা হিসেবে বেঁছে নিচ্ছে। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে দেশের ক্ষমতার মসনদে বসে থেকে উন্নয়নের জিকির তোলা আওয়ামী লীগ সরকারকে এর জবাব দিতে হবে। মুলত এই স্বৈরাচারী সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয় বলেই এদেশের জনগণের প্রতি তাদের কোনো দায়বদ্ধতা নেই। ইতিহাস সাক্ষী অতিতে কোনো স্বৈরাচার সরকার জুলুম নির্যাতন চালিয়ে পার পায়নি আপনারাও পাবেন না ইনশাআল্লাহ।
তিনি বলেন, ২৫ ও ২৬ শে ফেব্রুয়ারি পিলখানা ট্রাজেডি দিবস চলে গেল। আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই আধিপত্যবাদী শক্তি এদেশীয় দোশরদের সহযোগিতায় বিডিআর বিদ্রোহের নামে এই হত্যাযজ্ঞ ঘটায়। যেখানে ৫৭ জন সেনা অফিসার শহীদ হয়। অথচ দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধেও এতগুলো সেনা অফিসার নিহত হয়নি। দেশপ্রেমিক যেকোনো সরকারের জন্যই এদিন জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালন করা আবশ্যক ছিলো। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ হিসেবে আমাদের দূর্ভাগ্য যে, আধিপত্যবাদের দোশর এই সরকার এব্যাপারে এখনো কোন পদক্ষেপ নেয়নি। মুলত এদিনটি রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন না করার অর্থই হল দেশের সেনাবাহিনীকে অসম্মান ও অবজ্ঞা প্রদর্শন করা ছাড়া আর কিছুই নয়। আধিপত্যবাদী এই আগ্রাসী শক্তি আমাদের অর্থনীতি, রাজনীতি, সংস্কৃতি, ব্যবসা-বাণিজ্য সহ সকল ক্ষেত্রে গোলামীর শিকলে আবদ্ধ করতে চায়। এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাড়াতে হবে। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার স্বার্থে অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালন করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদেরকে ইসলামের মূল স্প্রিট থেকে প্রশিক্ষণ নিতে হবে। নিজেদের ঈমান ও আমল ঠিক রাখার প্রয়োজনে সঠিকভাবে দ্বীন ইসলামকে জানতে হবে। আজকে রাষ্ট্রের শিক্ষা ব্যবস্থায় যথেষ্ট ত্রুটি থাকার কারনে ইসলামের মুল চেতনা শিখতে আমরা ব্যর্থ হচ্ছি। বরং ৯২ শতাংশ মুসলমানের এই বাংলাদেশে পরিকল্পিতভাবে ইসলামী শিক্ষাকে দূরে ঠেলে দিয়ে শিক্ষা কারিকুলামে সমকামীতা ও বেহায়াপনা ঢুকিয়ে জাতি ধ্বংসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়াও ইসলাম শিক্ষার প্রসার রোধে নানামুখি ষড়যন্ত্র চলছে। আজকে গ্রামে গঞ্জে তাফসির মাহফিল ও ওয়াজের অনুষ্ঠানে সরকারের অনুমতির কথা বলে তা বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। এটা বাংলাদেশের মানুষের জন্য চরম লজ্জার বিষয়।
ড. মাসুদ বলেন, প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা) যে আদর্শের মাধ্যমে তার সাথীদেরকে উন্নত নৈতিকতায় সমৃদ্ধ করে একটি সোনার রাষ্ট্র তৈরী করেছিলেন। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীও সেই আদর্শকে ধারণ করে এদেশে একদল মানুষকে সোনার মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ। আজ এদেশের জনগণ নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তনে সত্যিকার নৈতিকতা সম্পন্ন মানুষদের রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে দেখতে চায়। তারা জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বকে গ্রহণ করতে ব্যাকুল হয়ে আছে। দেশে যদি নিরপেক্ষ কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তাহলে দেশের অধিকাংশ মানুষের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটবে ইনশাআল্লাহ। তিনি জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের গণমুখী চরিত্রের অধিকারী হয়ে সমাজের মানুষের সেবা অব্যাহত রাখার আহবান জানান।