বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারী ও বাউফল উন্নয়ন ফোরামের চেয়ারম্যান ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, জনগণের নির্বাচিত নেতা কখনো পালিয়ে যায় না। পালিয়ে যায় ঐ নেতা, যেই নেতা জনগণের ভোট ডাকাতি করে জোরপূর্বক ক্ষমতা দখল করে। ক্ষমতার অপব্যবহার করে যারা জনগণকে শোষণ করে, জনগণের সম্পদ চুরি করে বিদেশে পাচার করে তারা কখনো গণমানুষের নেতা হতে পারে না। জনগণ দ্বারা নির্বাচিত সরকারকে জনগণ ক্ষমতাচ্যুত করে না। জনগণ ক্ষমতাচ্যুত করে ঐ সরকারকে যেই সরকার আওয়ামী লীগের মত ফ্যাসিবাদ কায়েম করে, যেই সরকার দেশের নাগরিকদের গণহত্যা করে। শনিবার পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার মদনপুরা ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতা ছেড়ে কেন এক মিনিটও রাজনীতির ময়দানে নয় শুধু দেশেই ঠিকতে পারলো না। কারণ তারা গত ১৫ বছর মানুষকে ধোঁকা দিয়েছে। উন্নয়নের মহাসড়কে দেশকে নিয়ে গেছে মিথ্যা গল্প শুনিয়েছে। আসলে তারা দেশকে দুর্নীতির মহাসড়কে তুলে দিয়েছিল। তারা আর কিছুদিন সময় পেলে দুর্নীতির মহাসড়কে মারাত্মক এক্সিডিন্টে ঘটিয়ে বাংলাদেশ কে দেউলিয়া ঘোষণা করে ভারতের অঙ্গরাজ্য হিসেবে ঘোষণা করতো। বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম সেটি বুঝতে পেরে হাসিনার পদত্যাগের একদফা দাবি ঘোষণা দিলে দেশের সকল শ্রেনীপেশার মানুষ স্বতঃস্ফুর্ত ভাবে আন্দোলনে অংশগ্রহন করে। জনগণ চেয়েছে খুনি হাসিনার পদত্যাগ, খুনি হাসিনা দেশ ছেড়েই পালিয়ে গেছে। হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে তার ৩০০ এমপিও যে যেখান দিয়ে পারছে পালিয়ে গেছে। পটুয়াখালী-২ (বাউফল) আসনের ভোট চোর এমপিকেও খুঁজে পাওয়া যায় না। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন ক্ষমতাচ্যুত আর কেউ দেখেনি।
ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, আওয়ামী লীগ কোন জুলুম নির্যাতনের শিকার না হয়ে বরং তারাই বিরোধী দলমতের উপর, সাধারন জনগণের উপর জুলুম নির্যাতন চালিয়ে পরিশেষে দেশ থেকে পালিয়ে গেছে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দ সবচেয়ে বেশি তাদের জুলুম নির্যাতনের শিকার হয়েছে। কিন্তু জামায়াতের কোন নেতা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়নি। কোন নেতাকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করা যায়নি। জামায়াতের নেতৃবৃন্দ জনগণের অধিকার আদায়ের আন্দোলন করতে গিয়ে ফাঁসি বরণ করে নিয়েছে তবুও ফ্যাসিবাদ আওয়ামী লীগের সাথে আপোষ করেনি। আমাকে ২ শতাধিক মিথ্যা মামলা দিয়ে ৬৭ দিন রিমান্ডে নিয়ে অমানবিক নির্যাতন করেছে। আওয়ামী ফরমায়েশী রায়ে আদালত আমাকে সাড়ে ৫ বছরের কারাদন্ড দিয়েছে। কারণ আমাকে বাউফল বাসী থেকে বিচ্ছিন্ন করতে হবে। আমাকে বিচ্ছিন্ন করতে পারলেই বাউফলের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে পারবে। জনগণের সম্পদ লুট করতে পারবে। অস্ত্র আর মাদকের দুর্গ গড়ে তুলতে পারবে। কিন্তু আমি জনগণ থেকে একদিনে জন্যও বিচ্ছিন্ন হয়নি। জনগণের পাশে ছিলাম, আছি এবং আগামীতেও থাকবো।
এসময় তিনি উপস্থিত কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য মানুষের কল্যাণে কাজ করতে হবে। দুনিয়াতে কিছু পাওয়া না পাওয়ার জন্য নয়। জনগণের যে কোন প্রয়োজনে পাশে থাকতে হবে। এবঙ সকল আন্দোলন সংগ্রামে অতিতের মত সামনের সারিতে দেখে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা নেতৃত্ব অব্যাহত রাখবে। তিনি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় নাগরিকের সুফল জনগণেরে কাছে তুলে ধরে ইসলামী রাষ্ট্র বিনির্মানে জনগণের সমর্থন অর্জনে কর্মীদের ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।
মদনপুরা ইউনিয়ন জামায়াতের আমীর মাওলানা নুরুল্লাহ’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন পটুয়াখালী জেলা জামায়াতের আমীর অধ্যাপক শাহ আলম, শ্রমিক কল্যাণ বরিশাল আঞ্চলিক পরিচালক বাউফল উপজেলা আমীর মাওলানা রফিকুল ইসলাম, সেক্রেটারি অধ্যাপক খালিদুর রহমান, মাওলানা আবদুস সাত্তার ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় দাওয়া ও আইন বিষয়ক সম্পাদক, মুন্তাসির মুজাহিদ, পটুয়াখালী জেলা শিবির সভাপতি মেহেদী হাসান সহ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ। কর্মী সমাবেশ শেষে মদনপুরা ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর অফিস উদ্বোধন করেন ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ।
পরে কনকদিয়া ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর সম্প্রীতি সমাবেশ শেষে কনকদিয়া বাজারে ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর অফিস উদ্বোধন করেন ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ। এসময় তিনি উপস্থিত জামায়াত-শিবিরের নেতৃবৃন্দ ও বাজারের ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে বলেন, জামায়াত-শিবির কর্মী মানেই সমাজকর্মী। সমাজের যে কোন প্রয়োজনে দুর্যোগ-দুর্দিনে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা সবার আগে সবখানে এগিয়ে আসে এবং আসবে। জামায়াত-শিবির ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করে না। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ইসলাম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করে। মানুষ যদি মনে করেন এবং আল্লাহ যদি চান, তবে জামায়াত ইসলামী রাষ্ট্র পরিচালনা করবে। জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে আগামীর বাংলাদেশ হবে সুখী-সমৃদ্ধ বৈষম্য ও দুর্নীতি মুক্ত মানবিক বাংলাদেশ।