বাকশাল প্রতিষ্ঠা ও গণতন্ত্র হত্যার প্রতিবাদে রাজধানীতে জামায়াতের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর, সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারী একটি কলঙ্কিত দিন। একটা স্বাধীন দেশের মানুষ হিসেবে তারা স্বাধীন ভাবে বসবাস করবে, নির্ভয়ে নির্দ্বিধায় নিজের মত প্রকাশ করবে, ন্যায়ের পক্ষে কাজ করতে পারবে, অন্যায়ের বিপক্ষে প্রতিবাদ করতে পারবে। অথচ ১৯৭৫ সালের আজকের এই দিনে সকলের গলা টিপে ধরে কণ্ঠকে রোধ করা হয়েছিল। বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক দলকে বাতিল করে একটি মাত্র দল বাকশাল কায়েম করা হয়েছিল। বাকশাল কায়েমের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন আওয়ামী সরকার বাংলাদেশে স্বৈরাচারী শাসন কায়েম করেছিল। মূলত তারা নিজেদের ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার জন্যই বাকশাল কায়েম করেছিল। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের তৎকালীন ক্ষমতাসীনরা দেশটাকে মগের মুল্লুক মনে করে লুটপাট, ধর্ষণ, রাহাজানি শুরু করে দেশটাকে ধ্বংসের অতল গহ্বরে নিয়ে গিয়েছিল। লুটপাট করার পরে তাদের দুর্নীতি ঢাকতে তারা সকল গুদামে আগুন লাগিয়ে দিত, যেন তাদের দুর্নীতির কোন প্রমান না থাকে। এমন কোন অপকর্ম ছিলনা যা তারা করতে বাদ রেখেছিল। ৭৫ সালের বিভিষিকার মতো দেশে আজ গণতন্ত্র নেই, অর্থনীতিও শেষ, দেশে এখন জুলুমতন্ত্র চলছে। বাকশাল কায়েম করে, গণতন্ত্রকে হত্যা করে আওয়ামী লীগ দেশ ও জাতির যে ক্ষতি করেছিল জনগন নতুন করে তা আর দেখতে চায় না। আমরা দেখতে চাই মানুষ নিজেদের অধিকার ফিরে পেয়েছে, দুবেলা দুমুঠো খেয়ে শান্তিতে বসবাস করছে। এজন্য আমরা জনগণের নির্বাচিত সরকার দেখতে চাই।
তিনি আজ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে রাজধানীর একটি মিলনায়তনে বাকশাল প্রতিষ্ঠা ও গণতন্ত্র হত্যার প্রতিবাদে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরীর দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারী ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য যথাক্রমে বিশিষ্ট শ্রমিক নেতা আব্দুস সালাম, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক নুরুন্নবী মানিক, আব্দুর রহমান, ঢাকা মহানগরীর দক্ষিণের মজলিসে শুরা ও ঢাবির সাবেক সদস্য মোহাম্মদ রফিকুন্নবী, এডভোকেট জসিম উদ্দিন তালুকদার সহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, আওয়ামীলীগ বাকশাল কায়েম করে তাদের ইতিহাসের সব থেকে বড় ভুলটি করে ফেলেছিল। একটি দল বাকশাল কায়েম করার পরিবর্তে যদি তারা জাতীয় সরকার গঠন করত তাহলে এটি যুক্তিযুক্ত হত। যদি সকলের পরামর্শ নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করে সে আলোকে কাজ করতো তাহলে বাংলাদেশের ইতিহাস অন্যরকম হতো। মানুষের দুঃখ-দুর্দশা দূর হতো, কিছুটা হলেও তাদের মাঝে স্বস্তি ফিরে আসত। বাকশাল কায়েমের সাথে যারা সম্পৃক্ত ছিল তারা এমনভাবে লুটপাটে ব্যস্ত হয়ে পড়ল যার ফলে শেখ মুজিবুর রহমান বলতে বাধ্য হলেন মানুষ পেয়েছে সোনার খনি আর আমি পেয়েছি চোরের খনি। তারা যেভাবে মানুষের অধিকারকে হরণ করেছিল, মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা ছিল না শুধুমাত্র চারটি পত্রিকা বাকি রেখে সকল পত্রিকা বন্ধ করে দিয়েছিল। সেগুলোও ছিল সরকার নিয়ন্ত্রিত তাদের কোনো স্বাধীনতা ছিল না। সরকার যেই কথাগুলো বলতে চায়তো শুধু সেগুলোই প্রকাশিত হতো। জনগণের স্বার্থ এবং বিরোধীদলের কথা সেখানে ছাপানো হতো না। ঠিক একইভাবে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারও মানুষের কন্ঠরোধ, ভোট ও ভাতের অধিকারকে হরণ করেছে। যার ফলে আমরা দেখতে পায় আওয়ামী লীগের অধিকাংশ সদস্যই দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। তারা লুটপাট, ধর্ষণ, ব্যাংক-ডাকাতি থেকে শুরু করে এখন চর দখলের মতো স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় দখল করা শুরু করেছে। তারা বাকশালের শিক্ষাকে এখনো ধারণ করে মানুষের কোন অধিকার দিতে চায় না। আজকে আমার ভোট আমি দিতে পারি না বরং রাতেই অন্য কেউ তা দিয়ে দেয়। যারা মানুষের হক ভু-লুন্ঠিত করে, জনগণের অধিকার নিষ্পেষিত করে, তাদের দ্বারা জাতির কোন কল্যাণ সম্ভব নয়। এমতাবস্থায় সকল মানুষ রাজপথে নেমেছে যুগপৎ আন্দোলন করছে। তাদের দাবি এই সরকারের পতন চায় এবং কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে নির্বাচন চায়। আমরাও এজন্য আন্দোলন করছি আমাদের দাবী কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, একসময় এই কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য আওয়ামী লীগ আমাদের সাথে যুগপতভাবে আন্দোলন করেছিল। অথচ আজকে তারা কেয়ারটেকার সরকার চায় না। তার কারণ তারা গণতন্ত্র চায় না, তারা মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হোক তা চায় না, তারা ভোটের অধিকার চায় না, তারা ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করার জন্য যেকোন ভাবে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে থাকতে চাই। আল্লাহর ঘোষণা যতক্ষণ না কোন জাতি তাদের ভাগ্যের পরিবর্তনের জন্য চেষ্টা না করে ততক্ষন পর্যন্ত তিনি তাদের ভাগ্য পরিবর্তন করেন না। তাই আমাদেরকে আজ ঐক্যবদ্ধভাবে দেশ ও জাতির কল্যাণের জন্য রাজপথে নামতে হবে। মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। যদি জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা হয় আমরা বিশ্বাস করি জনগণের অধিকার ফিরে আসবে।
নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, আজকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী সরকার বাংলাদেশকে একটি পঙ্গু রাষ্ট্রে পরিনত করেছে। আজকে বিরোধী দলের উপর নিয়মিত জুলুম নির্যাতন ও গ্রেফতার চলছে। জামায়াতে ইসলামীকে তার রাজনৈতিক অধিকার দেওয়া হচ্ছেনা। জামায়াতের অফিস গুলো বন্ধ করে রাখা হয়েছে, নেতা-কর্মীদের যেখানেই পাওয়া যাচ্ছে সেখানেই অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করা হচ্ছে। তাদেরকে ঘরের মধ্যেও স্বাভাবিকভাবে পাওয়া গেলে তাদেরকে নাশকতার মামলা দিয়ে গ্রেফতার করা হচ্ছে। দাড়ি টুপি দেখে জামায়াত ভেবে সাধারণ মানুষকেও রাস্তা থেকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। যখন এদেশের জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশ বাঁচানোর আন্দোলনে ঐক্যমত পোষণ করছে। আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান যখন যুগপৎ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন তার মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তাকে এই ফ্যাসিস্ট সরকার মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার করেছে। জামায়াতের উপর নির্যাতনের খড়গ চাপিয়ে বিরোধী দলগুলো ও জনগণকে নিয়ন্ত্রণ করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আজ দেশ ও জাতি ঐক্যবদ্ধ। আসুন আমরা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য, দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য রাজপথে এমনভাবে আন্দোলন ও সংগ্রাম প্রতিষ্ঠা করি যেন বাকশালের আর কোন প্রেতাত্মা ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার দুঃসাহস না করে।