ড. মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম মাসুদ ১৯৭৮ সালের ১ মার্চ পটুয়াখালীতে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম অধ্যাপক সিরাজ উদ্দিন খান, মাতার নাম কানিস ফাতেমা। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স, মাস্টার্স এবং বাংলাভাষা ও সাহিত্যে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ১৯৮৭ সালে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরে যোগদান করেন। ১৯৯৬ সালে শিবিরের সদস্য হিসেবে শপথ গ্রহণের পর বিভিন্ন সময়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি, কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক সম্পাদক, ২০০৪ ও ২০০৫ সেশনে সেক্রেটারি জেনারেল এবং ২০০৬ ও ২০০৭ সেশনে কেন্দ্রীয় সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
সাংগঠনিক দায়িত্ব পালনকালে তিনি সৌদি আরব, শীলঙ্কা, ইতালি, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, মালয়েশিয়া প্রভৃতি দেশ সফর করেন। বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডের সাথে তিনি জড়িত। বর্তমানে তিনি বাউফল ফাউন্ডেশন ও বাউফল উন্নয়ন ফোরামের চেয়ারম্যান, পটুয়াখালী জেলা ফোরাম সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।
বাংলাদেশে ইসলামী আন্দোলন, ইসলামী ছাত্রশিবির, বিশ্ব পরিস্থিতি ও বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতি মোকাবেলায় ইসলামী ছাত্রশিবির তথা যুবসমাজের দায়িত্ব-কর্তব্য কী হওয়া উচিত- এসব বিষয় নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হয় তার সাথে। ছাত্র সংবাদের পাঠকদের উদ্দেশে তার পুরো সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো।
ছাত্র সংবাদ : আপনি কখন কিভাবে এ নেয়ামতপূর্ণ সংগঠনের দাওয়াত পেয়েছেন?
ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ : প্রথমেই আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দরবারে শত কোটি শুকরিয়া এই জন্য যে দেশের এহেন বিরাজমান পরিস্থিতিতেও ছাত্রসমাজের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন সৎ, দক্ষ, মেধাবী ছাত্রদের ঠিকানা বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সরাসরি পরিচালনায় প্রকাশিত মাসিক পত্রিকা ‘ছাত্র সংবাদ’ তার অর্থপূর্ণ ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে। ধন্যবাদ জানাই পত্রিকাটি প্রকাশের সাথে সম্পৃক্ত প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ পরিচালনা পর্ষদকে।
আলহামদুলিল্লাহ। জন্ম ও পারিবারিক সূত্রেই এই নেয়ামতপূর্ণ সংগঠনের দাওয়াতপ্রাপ্ত। শ্রদ্ধেয় আব্বা-আম্মা সংগঠনে সম্পৃক্ত থাকতে সরাসরি তত্ত্বাবধান করতেন। বিশেষ করে আমার সম্মানিত বড় ভাইয়া তৎকালীন ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদের সদস্য অবিভক্ত পটুয়াখালী-বরগুনা জেলা সভাপতি এবং পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় দাওয়াতি কার্যক্রম সম্পাদক মাওলানা এ কে এম ফখরুদ্দীন খান রাযী ভাই হাতে-কলমে এই প্রিয় কাফেলার দাওয়াত তুলে ধরেছেন। আর পরিবারে বড় ভাইয়ার (রাযী ভাই) বরাবরই এতটাই নৈতিক ও আদর্শিক প্রভাব ছিল যে তার চিন্তা, ধ্যান-ধারণা ও আদর্শের বাইরে আমরা বাকি ৯ ভাইবোনের ভিন্ন কোনো চিন্তা করার সুযোগই ছিল না। আর আমরা সে চেষ্টাও করিনি কখনও।
ভাল মনে আছে, ১৯৮৭ সালে সংগঠনের বাউফল উপজেলা কার্যালয়ে শহীদ দিবসের এক আলোচনা সভায় শুরুতেই কুরআন তেলাওয়াত করার জন্য ঘোষণা করা হয়Ñ তেলাওয়াত করবেন সংগঠনের কর্মী শফিকুল ইসলাম মাসুদ। আমি অনেকটা আমার অবস্থান মতো সমাবেশের একদম পেছনের সারিতে বসেছিলাম। ঘোষণা শুনে দু’টি কারণে শীতকাল হওয়ার পরও সমানে কাঁপতেছিলাম আর ঘামতেছিলাম। এই ভেবে যে এত হাজার মানুষের সামনে আমাকে তেলাওয়াত করতে হবে, তার সাথে বুক কাঁপতেছিলো এই কারণে যে আমি এই শহীদি কাফেলার কর্মী এই দৃপ্ত ঘোষণাও এই প্রথম শুনলাম। যা হোক, কোনো রকমে তেলাওয়াতে যতটা না ভালো তার চেয়ে অনেক দুর্বল অবস্থায় সূরা আসর অর্থসহ পাঠ করে ফিরে এলাম। আর একটা নির্মম সত্য কথা না বললে নিজের ওপর অবিচার করা হবে। প্রথম কখন, কোথায় আর কতবার যে সমর্থক ফরম পূরণ করেছি তার কোনো হিসাব আমার কাছে সত্যিই নেই। যতবার, যত জায়গায় সুযোগ পেয়েছি ততবার মনের আনন্দে কখনও বীরত্বের সাথে এই যোগদানপত্র পূরণ করতে কার্পণ্য করিনি। তবে ব্যতিক্রমটুকু না বললে তৎকালীন থানা দায়িত্বশীলদের প্রতি অবিচার করা হবে। তৎকালীন থানা সভাপতি সাইকেলে করে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে রিপোর্ট বই হাতে নিয়ে আমাকে কর্মী বানানোর উদ্দেশ্যে কতবার যে আমার কাছে এসেছেন তার কোনো হিসাব রাখা আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি। রিপোর্ট রেখে কর্মী হওয়াতে ছিলো আমার প্রবল আপত্তি। সবই করব কিন্তু রিপোর্ট রাখব নাÑ এই ছিল আমার মত। কখনও রিপোর্ট অযতœ অবহেলায় হারিয়ে ফেলেছি। ফেলে দিয়েছি, অবজ্ঞা কিংবা উপেক্ষাও করেছি। তার চেয়েও কষ্টের কথা হলো রিপোর্টের বিপক্ষে যুক্তি তুলে ধরার নামে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল ভাইদের সাথে চরম দুর্ব্যবহারও করেছি। ক্ষিপ্ত হয়ে উঠতাম সেই সব নিবেদিতপ্রাণ ভাইদের ওপর। কষ্ট পেয়ে সেসব ভাইদের আড়ালে আবডালে চোখের পানি ফেলতে দেখতাম। আমার করা সেসব অনাকাক্সিক্ষত ও দুর্ভাগ্যজনক আচরণের কথা মনে করে আমি এখনও কষ্ট পাই, লজ্জিত হই। এই সুযোগে আমি আমার সেসব প্রাণপ্রিয় দায়িত্বশীল ভাইদের কাছে ক্ষমা চাই। আল্লাহও যেন আমাকে মাফ করে দেন। লেগে থেকে সেসব দায়িত্বশীল ভাই আমাকে টেনে না তুললে আমিও হয়তো আর অন্য ৮-১০ জন ছাত্রের মতো অন্যায় ও অসত্যের কাছে মাথা নত করে নর্দমার কীট হয়ে পড়ে থাকতাম। আমার সেই অসদাচরণের প্রতিশোধ এখন আমি নিজেই নেয়ার অবিরাম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এই সংগঠন নিয়ে কেউ আমার সামনে নেতিবাচক কোনো চিন্তা কিংবা ধ্যান-ধারণা তুলে ধরলে আমি তার প্রতি হতাশ কিংবা ক্ষিপ্ত হয়ে মুখ ফিরিয়ে নেই না। বরং চেষ্টা করি আমার সেই দায়িত্বশীল ভাইদের কথা মনে করে লেগে থেকে ধৈর্যের সাথে ইতিচবাচক পন্থায় কাজ চালিয়ে যাওয়ার।
ছাত্র সংবাদ : আপনার সাংগঠনিক জীবনের একটি স্মরণীয় ঘটনা বলুন যা বর্তমান ছাত্রসমাজকে অনুপ্রাণিত করবে।
ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ : ছোট এ জীবন। ঘটে যাওয়া প্রতিটি ঘটনাই প্রায় জীবনের জন্য স্মরণীয় মুহূর্ত। তবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রজীবনে ঘটে যাওয়া অনেকগুলো ঘটনার মধ্যে একটি ঘটনা আজকের প্রেক্ষাপটে আমাকে বারবার আলোড়িত করে। পরিকল্পনামতো মাসের রাত্রিকালীন এবাদতের (শব্বেদারি) জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হলের মসজিদে আমরা এশার নামাজ পড়ার পর প্রায় শতাধিক ভাই কুরআনের আলোচনা শোনার জন্য বসেছি। আলোচনা শুনতে শুনতে দেখলাম আমাদের সাথে আরও অনেক ভাই যোগ দিয়েছেন। কুরআনের আলোচনা শেষ করে আর কিছু নফল নামাজ আদায় করে কিছুটা বিশ্রাম নিয়ে আমরা প্রায় সবাই তাহাজ্জুদ নামাজ জামায়াতের সাথে আদায় করেছিলাম। নামাজ শেষে আমাদের এক দায়িত্বশীল ভাই জান্নাত-জাহান্নামের একটি জীবন্ত আলোচনা এমনভাবে তুলে ধরেছেন যেন আমরা দুনিয়া থেকে আলাদা হয়ে গেলাম। কুরআন-হাদিসের অকাট্য যুক্তির কাছে আমরা আমাদের নিজেদেরকে সম্পূর্ণরূপে সঁপে দিয়ে সিদ্ধান্ত নিলাম যে, ঝঞ্ঝা-বিক্ষুব্ধ পাপ-পঙ্কিল, বিপদসঙ্কুল এই পৃথিবীতে ইসলামী আন্দোলনেই আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের একমাত্র পথ। আর আনুষ্ঠানিক কিছু এবাদত শুধু নয় বরং আল্লাহর সন্তুষ্টিই কেবল পারে আমাদের জাহান্নাম থেকে বাঁচাতে আর জান্নাতের স্রোতধারায় মিলিয়ে দিতে। আলোচনা শেষে মোনাজাত কেবল শুরু হয়েছে, সাথে নিভিয়ে দেয়া হয়েছে আলোও। একটু পরেই ফজরের আজান হবে, ঠিক তার আগ মুহূর্তে সমবেত তরুণরা চোখের পানি ফেলে কান্নায় ভেঙে পড়েন আল্লাহর কাছে। এমন সময় হলের গেট থেকে একজন ভাই দৌড়াতে দৌড়াতে এসে বলল, পুলিশ প্রশাসন পুরো হলটিকে ঘিরে ফেলেছে। আমাদেরকে গ্রেফতার করবে। খোঁজ নিয়ে জানা গেল তৎকালীন আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের থেকে প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে যে ছাত্রশিবিরের ক্যাডাররা হলের মসজিদে জড়ো হয়েছে অস্ত্রের ট্রেনিং নেয়ার জন্য। ব্যাস, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার দু-একজন অতি উৎসাহী সদস্য মসজিদে ঢুকে পড়লেন। কিন্তু অবাক দৃশ্য! তরুণ যুবকদের মোনাজাতের কান্নায় শুধু মসজিদ কিংবা হল নয়, পুরো আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। প্রথমে অবাক বিস্ময়ে কিছুটা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা। কিন্তু পরিকল্পনা মতো উপরের নির্দেশে নাটক তো তাদের সাজাতেই হবে। কারণ এই ঘটনার সফলতা কিংবা ব্যর্থতার সাথে প্রশাসনের কর্র্তাব্যক্তিদের প্রমোশন অথবা ডিমোশন জড়িয়ে রয়েছে ওতপ্রোতভাবে। একজন অফিসার তার ঊর্ধ্বতন অফিসারকে বলছেন স্যার, ঘটনা সত্য। অস্ত্রের ট্রেনিং দিতে গিয়ে নিজেদের হয়তো কেউ গোলাগুলিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাই এত চিৎকার করে কান্নাকাটি করছে।
স্যার এত বড় সফল অভিযান তাই আমাদের আরও ঊর্ধ্বতন কর্র্তৃপক্ষের উপস্থিতিতেই তা হওয়া দরকার। কথা মত কাজ হলো। মসজিদ ঘিরে রেখে সকল ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাকে জড়ো করা হলো। অনুষ্ঠানের মোনাজাত প্রায় শেষের দিকে। হঠাৎ লাইট জ্বালিয়ে দিলেন পুলিশ কর্মকর্তা। এবার পুলিশ অফিসারদের নতুন এক অভিজ্ঞতা সঞ্চার করার পালা। এবার অভিযান শুরু। কিন্তু কান্নারত তরুণ যুবকদের কাছে এগিয়ে যেতেই তারা শুনতে পান ছাত্রশিবিরের ক্যাডারদের অস্ত্র ট্রেনিংয়ের অজানা এক অধ্যায়! কেউ তার পাহাড় সমান গোনাহ মাফের জন্য আল্লাহর কাছে আসমান সমান রহমত চেয়ে শিশুর মতো আকাশের দিকে হাত তুলে চিৎকার করে চোখের পানি ফেলছেন। কেউ কাঁদছেন তার চিরদুঃখী বাবা-মায়ের জন্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা আর আন্দোলনের কাজে জড়িত থাকায় ‘মা-বাবার’ হক আদায় করতে না পারার ব্যর্থতার কথা মনে করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের পড়াশোনা আর নৈতিক পরিবেশ রক্ষায় আল্লাহর সাহায্য চাচ্ছেন ক্রন্দনরত তরুণ যুবকেরা। নিজের জীবনে ইউসুফ (আ)-এর মত নৈতিক চরিত্রের জোড় আবদার করে মোনাজাত করতে গিয়ে অনেকেই যেন কোনোভাবেই কান্না থামাতেই পারছেন না। ক্যাম্পাসে শহীদের রক্তের কথা মনে করে ডুকরে ডুকরে কাঁদলেন শহীদের প্রিয় সাথীরা। কে থামাবে তাদের কান্না। তবুও অস্ত্র উদ্ধার অভিযান শুরু। অস্ত্রের নামে কুরআন-হাদিস, ইসলামী সাহিত্য যেখানে যা পাওয়া গেছে সবসহ গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হলো অনেককে। জনৈক অফিসার নিজের আবেগ সামলাতে না পেরে অংশ নিয়েছিলেন মোনাজাতে। আর তিনি বলেছিলেন, আমি আল্লাহকে বলেছি আমিতো বড় পুলিশ অফিসার না হয়ে যদি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হতে পারতাম। আর পারতাম এরকম কিছু তরুণ যুবকের সাথে রাত কাটাতে, তা হলে জীবনটা কতই না ধন্য হতো। আমি পারলাম না কিন্তু আমাদের সন্তানদেরকে পাবে তোমাদের সাথে। নির্যাতনে ভয় পেয়ো না, বিজয় তোমাদেরই হবে। সত্যি কালক্রমে তাদের অনেকের সন্তানকে পেয়েছি আমাদের এই কুরআনের ট্রেনিংয়ে। আর বিজয়ও আমাদেরই হবে। হবেই ইনশাআল্লাহ।
ছাত্র সংবাদ : আপনি কিভাবে সাংগঠনিক কাজ ও ছাত্রজীবনের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতেন?
ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ : ছাত্রজীবন এবং সংগঠনের ভারসাম্য রক্ষা করার বিষয়টি একটি দীর্ঘ আলোচনার ব্যাপার। আর তা ছাড়া এটি স্থান, কাল পাত্র, ব্যক্তিভেদে এর নির্দেশিকা ও তার প্রয়োগপ্রক্রিয়া ভিন্ন হওয়াটাই স্বাভাবিক। আমার জীবনের বাস্তবতা আর অন্য দু’জনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ না-ও হতে পারে। হওয়াটা স্বাভাবিকও নয়। তার পরও প্রাথমিকভাবে নীতিগত কয়েকটি বিষয় সামনে রাখা প্রয়োজন।
১. ভারসাম্যপূর্ণ জীবন, এটি আল্লাহপ্রদত্ত জীবনব্যবস্থা।
২. আল্লাহ তায়ালা মানুষকে ভারসাম্যপূর্ণ করেই সৃষ্টি করেছেন। (সূরা ইনফিতার, আয়াত ৭)
৩. ভারসাম্যপূর্ণ জীবনের উদাহরণ আমাদের প্রিয় নবী রাসূল করীম (সা)। সুতরাং তাকেই আদর্শ মানতে হবে।
৪. ছাত্রজীবন আর সংগঠন একটি আর একটির পরিপূরক।
ভালো ছাত্র মানে ভালো সংগঠক, আর ভালো সংগঠক মানেই ভালো ছাত্র হওয়ার কথা। কোনো ব্যতিক্রম হলে হতেও পারে। আমাদের আলোচনা সামগ্রিক।
৫. আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাহকে অতিরিক্ত দায়িত্ব চাপিয়ে না দেয়াটা আল্লাহর নিয়ম। এই নীতিতে বিশ্বাস দৃঢ় রেখে সাহস করে কাজ চালিয়ে যেতে হবে। (সূরা বাকারাহ, আয়াত ২৮৬)
৬. আমরা মধ্যমপন্থী জাতি। আমাদের ভারসাম্যপূর্ণ হওয়াটাই স্বাভাবিক।
৭. সংগঠন ঈমানের দাবি আর পড়াশোনা সেই ঈমানের দাবির অংশবিশেষ।
করণীয় কাজ :
ক. সকল নীতিমালা, পথ এবং প্রক্রিয়া সামনে রেখে নিজের মত করে একটি গাইডলাইন সাজিয়ে নিতে হবে। কারণ মনের রাখতে হবে আমি অন্য কারো মতো নই, আমি আমার নিজের মতো।
খ. সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ। আমি কী করতে চাই কিংবা কী হতে চাই। আমার জীবন কি দুয়িনয়ামুখী হবে, না পরকালমুখী। আমি টার্গেট নির্ধারণ করব পরকালমুখী জীবন আর অনুসরণ করব দুনিয়ামুখী জীবন তা কোনোভাবেই সফল হতে পারে না। দুনিয়া টার্গেট করলে পরকাল পাওয়া যাবে না। কিন্তু পরকালীনমুখী জীবন টার্গেট করলে দুনিয়া এবং পরকাল উভয় জগতেই সফল হওয়ার সুযোগ রয়েছে।
গ. সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা গ্রহণ। পরিকল্পাকে চার স্তরে সাজিয়ে নিতে হবে। কারণ প্রয়োজনেরও ভাগ আছে। যেমন-
১. গড়ংঃ রসঢ়ড়ৎঃধহঃ -খুবই গুরুত্বপূর্ণ,
২. ঠবৎু রসঢ়ড়ৎঃধহঃ -খুব গুরুত্বপূর্ণ,
৩. ওসঢ়ড়ৎঃধহঃ -গুরুত্বপূর্ণ,
৪. খবংং রসঢ়ড়ৎঃধহঃ -কম গুরুত্বপূর্ণ।
পরিকল্পনা এভাবে বাস্তবায়নের চেষ্টা থাকলে সংগঠন এবং ছাত্রজীবন মুখোমুখি দাঁড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। অন্যথায় একটি আরেকটির জন্য সাংঘর্ষিক হয়ে যেতে পারে, যা আমাদের কারো কাম্য নয়।
ঘ. সময়ের সদ্ব্যবহার (সূরা আসর)।
মুমিনের আগামীকাল আজকের তুলনায় অবশ্যই ভালো হতে হবে। সে ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, যা পরশু করলে হবে তা কালকের জন্য ফেলে না রেখে আজকেই সম্পন্ন করার চেষ্টা করতে হবে। কারণ আগামীকাল পরিস্থিতি আপনার জন্য আরও কঠিন হবে ধরে নিয়ে এগুতে হবে এবং আমরা সবাই স্বীকার করতে বাধ্য যে, বাস্তবতা আমাদেরকে তাই মনে করিয়ে দেয়। প্রকৃত মানুষের জীবনে মৃত্যু ছাড়া অবসর বলতে কিছু নেই- থাকার কথাও নয়।
ঙ. লেগে থেকে লক্ষ্যে পৌঁছার প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা : সংগঠন করতে করতে পড়তে হবে- পড়তে পড়তে সংগঠন নয়। কারণ একজন মুমিনের জন্য সংগঠনটা সামগ্রিক আর পড়াশোনাটা আংশিক। আমি যথার্থ সংগঠক হলে সংগঠনই আমাকে পড়তে বাধ্য করবে। কিন্তু সব পড়াশোনা আমাকে সংগঠন করতে বাধ্য না-ও করতে পারে। আবার পড়াশোনাবিহীন সংগঠন নিরর্থক হয়ে যেতে বাধ্য।
চ. পরিবেশ তৈরি নিজের দায়িত্ব :
এ পৃথিবীতে কেউ কাউকে কিছু করে দেয় না। করে নিতে হয়। অন্যেরা সহযোগিতা করে মাত্র। আমাদের অনেকের অভিযোগ, পড়তে পারি না কিংবা পড়ার পরিবেশ পাই না। এই অভিযোগ আংশিক বাস্তব হলেও পুরোপুরি নয়। কারণ পড়ার মতো পরিবেশ তৈরির দায়িত্বও আপনাকেই নিতে হবে। যে কোনো পরিবেশে পড়ার মতো অভ্যাস এবং উপকরণ থাকতে হবে। যারা সফল হয়েছেন তারা নিজেরাই দায়িত্ব নিয়েছেন।
ছ. অন্যান্য বিষয়ের মতো ভারসাম্যপূর্ণ জীবনের জন্য আল্লাহর সাহায্যের কোনো বিকল্প নেই। রাব্বিশ রাহলি ছাদরি …. কাওলি।
ছাত্র সংবাদ : সাম্প্রতিক নানামুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ইসলামী ছাত্রশিবিরের ভূমিকা কী হওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?
ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ : মানুষ মাত্রই তাকে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়। জীবন মানে চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে ছাত্রশিবিরের জন্য চ্যালেঞ্জটা একটু ভিন্ন। কারণ সম্পূর্ণ প্রতিকূল স্রোতে তাকে বরাবরই পথ চলতে হচ্ছে। আর ছাত্রশিবির তো তরুণ যুবকদের কাফেলা। যে বয়সে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। একটি জাতির পরিবর্তন এই তরুণ যুবকদের ওপর নির্ভরশীল। যুবকদের রক্তই আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বেশি প্রিয়। এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়। আলহামদুলিল্লাহ ছাত্রশিবির চ্যালেঞ্জ নিচ্ছে ভবিষ্যতেও নিতে হবে এবং তা মোকাবেলা করতে হবে। চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমাদের নিম্নোক্ত প্রস্তুতি থাকতে হবে :
১. আদর্শিক ও নৈতিক শক্তির প্রস্তুতি।
২. জ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তির প্রস্তুতি।
৩. ছাত্রসমাজকে ঐক্যবদ্ধ করার প্রস্তুতি। যাকে বলা হয় জাতীয় ঐক্যের শক্তি।
৪. উদার ও ইতিবাচক মানসিকতা সমুন্নত রাখার প্রস্তুতি। আকাশের মতো উদার আর বাতাসের মতো নির্মল মন তৈরির ধারা অব্যাহত রাখা।
৫. কুরআনের বিধান অনুযায়ী মন্দের জবাব ভালো দিয়ে প্রদান করার প্রস্তুতি। “উহারা প্রচার করুক হিংসা বিদ্বেষ আর নিন্দাবাদ /আমরা বলিব সাম্য শান্তি এক আল্লাহ জিন্দাবাদ।”
সর্বোপরি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নিজেকে কুরআনের আলোকে তৈরি করার প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে হবে।
ছাত্র সংবাদ : বর্তমান পরিবেশে কোন বিষয়ের প্রতি শিবির কর্মীদের সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?
ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ : প্রথমত, আমরা যেন ভুলে না যাই যে প্রত্যেকটি সময়ই আমাদের জন্য বর্তমান। আর এখনকার এই পরিবেশে-প্রথমত নিজেকে স্বাভাবিক রাখা। স্বাভাবিক থেকে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি মোকাবেলা করা। নিজে অস্বাভাবিক হয়ে উঠলে পরিস্থিতি মোকাবেলা তার দ্বারা প্রশ্নই ওঠে না।
দ্বিতীয়ত, নিজেকে রক্ষ করা। আমি যেন হারিয়ে না যাই। সে ক্ষেত্রে সরাসরি কুরআন-হাদিস ব্যাখ্যাসহ অধ্যয়ন। রাসূল (সা)-এর বিপ্লবী জীবন ও আসহাবে রাসূল (সা)-এর জীবনধারা অধ্যয়ন।
তৃতীয়ত, নিজেকে কোন না কোন ইতিবাচক কর্মকা-ে ব্যস্ত রাখা। অলস মস্তিষ্কে যেন শয়তান কোনভাবেই হাত দিতে না পারে ।
চতুর্থত, ধৈর্যের চরম পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন। আর সে ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, ধৈর্যশীলরাই সফলকাম এবং ধৈর্যশীলদের সাথেই আল্লাহ আছেন। আর আল্লাহ যাদের সাথে থাকেন, তাদের কোনো পরাজয় নেই। পঞ্চমত, যেকোনো মূল্যে আনুগত্যের পরিবেশে অবস্থান। সাময়িক আনুগত্যহীনতায় আমার সমস্ত আমল যেন বরবাদ না হয়ে যায়। আমার পছন্দ হোক কি না হোক, আমার ভালো লাগুক আর না লাগুক, সংগঠনের সিদ্ধান্তকেই চূড়ান্ত বলে মেনে নিয়ে তা বাস্তবায়নের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালানো। সর্বোপরি সঙ্কটকালীন সময়ে শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা। ময়দানের রক্ত ঘাম আর গভীর রাত্রের চোখের পানিই যেন হয় আমাদের অন্যতম হাতিয়ার।
ছাত্র সংবাদ : বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্বে যে চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হয়েছে সে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ছাত্রশিবির কি যথার্থ ভূমিকা পালন করছে বলে আপনার মনে হয়?
ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ : নেতৃত্বের সঙ্কট একটি দেশের জন্য ভয়াবহ বিপর্যয় বয়ে নিয়ে আসে। দেশের অধিকাংশ মানুষের চিন্তা-চেতনা, বিশ্বাস, দৃষ্টিভঙ্গিকে সামনে রেখে নেতৃত্ব নির্ধারণ বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় অভাব তাতে কোনো সন্দেহ নেই। সেই অভাব পূরণে ছাত্রশিবিরের ভূমিকা অবিস্মরণীয়। তবে সঙ্কট পূরণে এখনও তা পর্যাপ্ত নয়। তার অবশ্য কারণও রয়েছে। পদে পদে নানামুখী ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে হচ্ছে ছাত্রশিবিরকে। আবার এ কথাও ঠিক যে, ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করেই নেতৃত্বের মাপকাঠিতে উন্নীত হতে হয়, ছাত্রশিবির হচ্ছেও তাই। এ দেশের মানুষের আশার দিক তৈরি হয়েছে যে, সময়ের পরিক্রমায় ছাত্রশিবির প্রত্যাশা অনুযায়ী প্রাপ্তির সফল বাস্তবায়ন করতে পারবে। আজকে নেতৃত্বের যে কয়টি বড় সঙ্কট, তার প্রায় সবগুলোকেই ছাত্রশিবির মোকাবেলা করে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। যেমন- সঙ্কটগুলো হলো :
ক) আদর্শিক ও নৈতিক সঙ্কট,
খ) নেতৃত্বের প্রতি জনগণের আস্থার সঙ্কট,
গ) জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার সঙ্কট,
ঘ) সন্ত্রাস ও দুর্নীতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার সদিচ্ছার সঙ্কট,
ঙ) সহমর্মিতা ও সহনশীল মনোভাব পোষণের সঙ্কট,
চ) ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের সঙ্কট,
ছ) নিজেদের মধ্যে গণতন্ত্র চর্চার সঙ্কট।
এ জাতীয় নানা সঙ্কট ও বহির্বিশ্বের চ্যালেঞ্জসহ সকল বিষয়ে ছাত্রশিবির ভবিষ্যতে বাংলাদেশের মানুষেকে আশার আলো দেখাতে পেরেছে, যা ভবিষ্যতে আরও বেগবান হবে বলে আমরা মনে করি। সবচেয়ে বড় কথা হলো দেশের অর্জিত স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় একদল তরুণের যে ত্যাগ ও কোরবানির উদাহরণ পেশ করা দরকার ছাত্রশিবির ইতোমধ্যেই সেই উদাহরণ উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে। ভবিষ্যতের প্রয়োজনেও তারা প্রস্তুত আছে বলে দেশবাসী বিশ্বাস করে। নেতৃত্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এটিই ছাত্রশিবিরের সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ।
ছাত্র সংবাদ : বর্তমান তথ্য ও বুদ্ধিভিত্তিক আন্দোলনে ছাত্রসমাজের ভূমিকা কী হওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?
ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ : শুধুমাত্র তথ্যসন্ত্রাসই নয়, কোনো সন্ত্রাসই কোন কালে বিজয়ী হয়নি, হবেও না। সাময়িকভাবে একটি জাতি বা গোষ্ঠীকে বিভ্রান্ত করা যায়। কিন্তু স্থায়ীভাবে তাদেরকে অর্জন করা যায় না। তাই আমাদের চিন্তা ও কর্মপদ্ধতি হতে হবে স্থায়ী ও দীর্ঘমেয়াদি। যদিও তথ্যসন্ত্রাস আজ একটি ভয়াবহ দুরারোগ্য ব্যাধিতে রূপ নিয়েছে, যা ছড়িয়ে পড়েছে দেশ থেকে দেশান্তরে। এ ক্ষেত্রে আমাদের করণীয় হলো :
১. আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তিতে আমাদের সীমাবদ্ধতা কাটাতে হবে।
২. বিকল্প গণমাধ্যম তৈরির কার্যকর পদক্ষেপ।
৩. গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বদের মাঝে পরিকল্পিতভাবে ইসলামের আহ্বান পৌঁছাতে হবে।
৪. তথ্যসন্ত্রাসের নেতিবাচক দিক জাতির সামনে তুলে ধরতে হবে।
৫. তথ্যসন্ত্রাস একটি মাকড়সার জালের মতো সময়ের ব্যবধানে তা ছিন্ন হবেই। এই বিশ্বাসটুকু বুকে ধারণ করে সাধ্যমত ইতিবাচক কর্মকান্ড অব্যাহত রাখতে হবে।
ছাত্র সংবাদ : বর্তমান সরকার যেভাবে ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলনের ওপর খড়গহস্ত, তাতে ছাত্রশিবিরের কাজের মধ্যে কোনরূপ ব্যত্যয় ঘটছে বলে কি আপনার মনে হয়? কোন পন্থা অবলম্বন করলে জুলুম-নিপীড়নের সঠিক জবাব দেয়া যাবে বলে মনে করেন?
ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ : ইসলামী আন্দোলনে নির্যাতন নিপীড়ন এটি নতুন কিছু নয়, বরং তা ইতিহাসেরই ধারাবাহিকতা মাত্র। আবার পাশাপাশি ইতিহাসের ধারাবাহিকতার অংশ এটিও যে নির্যাতনকারীদের পরাজয় আর নির্যাতিতদের বিজয় অবশ্যম্ভাবী। নির্যাতনকারী ব্যক্তি বা গোষ্ঠী তাদের সর্বস্ব হারিয়ে সর্বশেষ হাতিয়ার হিসেবে এই অস্ত্রটি ব্যবহার করে। যা তাদের সর্বশেষ পরিণতি জানান দেয় মাত্র। এই নির্যাতন ছাত্রশিবিরের স্বাভাবিক কার্যক্রমে কিছুটা হলেও বিঘœ সৃষ্টি করে। তবে তা অর্জনের তুলনায় খুবই নগণ্য। এই নির্যাতন নিপীড়নের অধ্যায় অতিক্রম করে ছাত্রশিবিরের পরবর্তী যে বিজয়ের ধারা সূচিত হবে তা শুধুমাত্র স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে কোন কালে সম্ভব হয়নি। তাই এটা মেনে নিয়েই যতদূর সম্ভব পরিবর্তিত পরিস্থিতি সামনে নিয়ে স্বাভাবিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে। আলহামদুলিল্লাহ। ছাত্রশিবির তা করতে সক্ষম হচ্ছে। যার ধারাবাহিকতা বহমান থাকবে ইনশাআল্লাহ।
অনেক কিছুর জবাব সারাসরি কিংবা তাৎক্ষণিক দেয়া যায় না কিংবা দেয়াটা স্বাভাবিকও নয়। জুলুম নির্যাতনের জবাব দেয়া খানিকটা সে রকমই। সরাসরি কিংবা তাৎক্ষণিক জবাব না দেয়াটাকে আমরা যেন দুর্বলতা অথবা বোকামি না ভাবি। একটি বৃক্ষ দীর্ঘ সময় নিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়ায় আর মুহূর্তেই ঝড় এসে তাকে ভেঙে ফেলতে চায়। গোঁয়ার্তুমি কিংবা অহঙ্কারের বশবর্তী হয়ে তখন মাথা উঁচু করে থাকতে চাওয়ার মধ্যে কোনো বুদ্ধিদৃপ্ততা বা কৃতিত্ব কাজ করে না বরং ঝড়-ঝাপটা ভেঙে দিয়ে বৃক্ষের বোকামির চিত্রই ফুটিয়ে তোলে। কিছু সময়ের জন্য মাথাটা নিচু করে ক্ষণিকের ঝড়কে পার করতে পারলেই কেবল সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য অর্জন সম্ভব। তদুপরি আমাদের কিছু সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকা দরকার। যেমন-
১. মন্দের জবাব ভালো দিয়ে দেয়ার চেষ্টা,
২. জুলুম-নির্যাতন করে আমার যে ভাল কাজ তারা বন্ধ করতে চায়, তার পরিমাণ আরও বাড়িয়ে দিয়ে জুলুম নির্যাতনের ইতিবাচক প্রতিশোধ নেয়া।
৩. নির্যাতনকারী ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর কাছে ইসলামের সুমহান বাণী পৌঁছে দেয়ার সব পথ অবলম্বন করা। এর মাধ্যমে কেউ হয়ত পরিবর্তন হবে। কেউ পরিবর্তন না হলেও নির্যাতন করা থেকে বিরত হবে। আর না হলে কেয়ামতের মাঠে নির্যাতনকারী নিজেকে আল্লাহর কাছে আসামি হিসেবে দাঁড় করলেও আমাকে আপনাকে আসামি করা থেকে বঞ্চিত হবে। আমাকে আল্লাহ রক্ষা করবেন আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়ানো থেকে, যা হবে নির্যাতনকারীর প্রতি আমার সবচেয়ে বড় প্রতিশোধ।
সর্বোপরি যে ইসলামী আন্দোলনের প্রতি তাদের (নির্যাতনকারীদের) এত ক্ষোভ আর উগ্রতা সেই আন্দোলন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কেবল দুনিয়াতে সঠিক জবাব দেয়া সম্ভব।