বিসিএসসহ সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত বৈষম্য বিরোধী ছাত্র সমাজের যৌক্তিক আন্দোলনে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের পৈশাচিক, বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ।
নেতৃবৃন্দ বলেন, মেধাবীদের উপেক্ষা করে দলীয় নিয়োগ নিশ্চিত করতে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকার শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবিকে অগ্রাহ্য করছে। শিক্ষার্থীরা মেধার ভিত্তিতে বিসিএস সহ সরকারি চাকরিতে নিয়োগ নিশ্চিত করা বৈষম্যমূলক কোটা বাতিলের দাবি জানিয়েছে। সারাদেশের শিক্ষার্থীদের দুর্বার আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালে সরকার কোটা ব্যবস্থা বাতিল করে বিগত কয়েক বছর নিয়োগ প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছিল। কিন্তু হঠাৎ আদালতকে ব্যবহার করে কোটা পুনর্বহালের আদেশ শিক্ষার্থীদের সাথে প্রতারণার শামিল। যার বিরুদ্ধে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাধারণ শিক্ষার্থীরা রাজপথে নেমে এসেছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, বর্তমান অবৈধ ফ্যাসিস্ট সরকার শিক্ষার্থীদের সেই যৌক্তিক দাবিকে দমন করার জন্য ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দিয়েছে। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ ও বহিরাগত সন্ত্রাসীরা হায়নার মতো ঝাঁপিয়ে পড়েছে।
আমরা বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করেছি, গত ১৪ জুলাই রবিবার বিকেল থেকে ১৫ জুলাই সোমবার সারারাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর ছাত্রলীগ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নিয়ে আসা বহিরাগত সন্ত্রাসীদের দিয়ে হলে হলে গিয়ে হামলা চালিয়েছে। প্রকাশ্যে শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি করার মতো ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটানো হয়েছে। আমরা আরো উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করেছি যে, জননিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশ বাহিনী ছাত্রদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের সহযোগী হিসেবে ভূমিকা পালন করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের পাশে না দাঁড়িয়ে ছাত্রলীগের পক্ষাবলম্বন করেছে। আপাতদৃষ্টে মনে হচ্ছে, গোটা রাষ্ট্রযন্ত্রকে শিক্ষার্থীদের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা আরো লক্ষ্য করেছি, দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ধরে নিয়ে নির্যাতন করেছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের ওপর আক্রমণ করতে ছাত্রলীগকে উস্কে দিয়েছে। যার ফলশ্রƒতিতে ছাত্রলীগ আরো বেপরোয়া হয়ে অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর নির্মমতা চালিয়েছে। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থেকে প্রধানমন্ত্রী শিক্ষার্থীদের তুচ্ছ তাচ্ছিল্য ও অপমান করেছেন। যা চলমান পরিস্থিতিকে আরো সংকটাপন্ন করেছে। ইতোমধ্যে এ ঘটনা আন্তর্জাতিক মহলকেও ব্যাপকভাবে নাড়া দিয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রেস ব্রিফিংয়ে এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার গতকালের ঘটনায় শতাধিক আহত হওয়ার কথা বলেছেন। যা একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের জন্য খুবই লজ্জাজনক।
একটি অবৈধ ভোটবিহীন ফ্যাসিবাদী সরকার ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখায় আজ দেশের এ দুরাবস্থা। বিরোধী মতকে দমন পীড়নের ধারাবাহিকতায় নিরীহ ছাত্রদের ওপরেও নিকৃষ্ট হামলা চালাতে সরকার তার সন্ত্রাসী পেটুয়া বাহিনী লেলিয়ে দিয়েছে। আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সেই সাথে নিরীহ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনা ও অবিলম্বে কোটা সংস্কারের যৌক্তিক দাবি মেনে নেয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি। সেই সাথে দেশবাসীকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়ে এই ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তোলার উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।